বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
Sakoler IT- সকলের আইটি পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্বাগতম! সকলের আইটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখি। যেমন, ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগিং, ধর্ম, হেলথ টিপস, মোবাইল টিপস, কম্পিউটার টিপস ইত্যাদি। আমাদের লেখাগুলো থেকে যদি আপনারা সামান্যতম উপকৃত হোন তাহলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আজকের পোস্টটি হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মেরাজ সম্পর্কে।
মেরাজের ঘটনাঃ
ইসরা বা মেরাজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে এরশাদ করেছেন,
"পবিত্র সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রি বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চারপাশে রয়েছে বরকত, যাতে আমার কিছু নিদর্শন তাঁকে দেখানো যায়। আর আল্লাহ তায়ালা অধিক শুনেন, দেখেন।"
[সূরাঃ বানী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১]
ইসরা শব্দের অর্থ হচ্ছে, ভ্রমণ। অর্থাৎ মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ইসরা বলা হয়।
মেরাজ শব্দের অর্থ হচ্ছে, উর্দ্ধ ভ্রমণ। মসজিদে আকসা থেকে সপ্ত আসমান, সিদরাতুলমুনতাহা এবং আল্লাহ তায়ালার আরশে আজীম ভ্রমণকে মেরাজ বলে।
আল্লাহর রাসূল সাঃ এক রাতে শুয়ে ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল আঃ এসে হাজির হলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে আসলেন কিছু দূরে। তারপর তাঁকে শুইয়ে দিয়ে তাঁর বুক থেকে নাভী পর্যন্ত চিরে দিলেন তারপর তাঁর হার্ট বা হৃদয়টা বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে দিলেন। তারপর সর্ণ্বের পেয়ালা থেকে ইলম, হিকমত তার ভিতরে ঢেলে ভরপুর করে দিলেন। তারপর হৃদয়টা যথাস্থানে রেখে আবার সেলাই করে দিলেন। এটাকে বলে সিনা চাক বা বক্ষ বিদীর্ণ। তারপর রাসূল সাঃ কে নিয়ে জিবরাইল আঃ বোরাকে করে মসজিদে আকসায় পৌঁছিলেন। বোরাক হচ্ছে, গাধার চেয়ে ছোট অত্যন্ত দূতগতি সম্পূর্ণ প্রাণী।
মসজিদে আকসায় এসে দেখেন অসংখ্য নবী রাসূলগণকে সেখানে হাজির করা হয়েছে। তারপর দু রাকাত নামাজের জন্য একামাত দেয়া হলো। জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাত ধরে ইমামতির স্হানে দাঁড় করিয়ে দিলেন। রাসূল সাঃ সমস্ত নবীকে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। তাই তাঁর উপাধি হচ্ছে, ইমামুল মুরসালিন বা সমস্ত নবীদের ইমাম বা সর্দার।
নামাজ শেষে জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট দুটি পেয়ালা নিয়ে হাজির হলেন। একটি পেয়ালায় দুধ ছিল আর একটি পেয়ালায় শরাব। রাসূলুল্লাহ সাঃ দুধের পেয়ালাটি নিয়ে পান করলেন। জিবরাঈল আঃ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ আজ যদি আপনি শরাবের পেয়ালা পান করতেন তাহলে আপনার সমস্ত উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেতো।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে বোরাকে চড়ে আসমানের দিকে রওয়ানা হলেন। প্রথম আসমানের দরজার নিকট গিয়ে কড়া নাড়লেন। দরজার গার্ট ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন কে? জিবরাঈল আঃ নিজের পরিচয় দিলেন। ফেরেশতা আবার জিজ্ঞেস করলেন আপনার সাথে কে? জিবরাঈল আঃ বললেন তিনি হচ্ছেন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ। ফেরেশতা আবার জিজ্ঞেস করলেন তাঁকে কি প্রবেশের অনুমতি আছে? জিবরাঈল আঃ বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিয়ে আসার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন। তখন ফেরেশতা অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে দরজা খুলে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ কে মারহাবা ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ বলে অভিবাদন জানালেন।
রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রথম আসমানের ভিতরে প্রবেশ করে দেখলেন আদম আঃ। জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বললেন, তিনি হচ্ছেন, আদম আঃ তাঁকে বসা এবং তাঁর ডানে বামে আরো অনেক লোক বসে আছে। সেই ব্যক্তি তাঁর ডান পাশে তাকালে হাসেন এবং বাম পাশে তাকালে কাঁদেন। জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে তাঁর পরিচয় জানিয়ে দিলেন, তিনি হচ্ছেন আদম আঃ তাঁর ডান পাশে বসা লোকগুলো হচ্ছে জান্নাতি। সেজন্য তিনি ডান পাশে তাকিয়ে হাসেন। আর বাম পাশের লোকগুলো জাহান্নামি। সেজন্য তিনি বাম পাশে তাকিয়ে কাঁদেন।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন। জিবরাঈল আঃ দরজায় করাঘাত করলেন। দাররক্ষী ফেরেশতা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেন অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে মারহাবা জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃ দ্বিতীয় আসমানে প্রবেশ করে হজরত ঈসা আঃ এবং ইয়াহিয়া আঃ কে দেখতে পেলেন। তারপর তাঁদের সাথে সালাম বিনিময় করে। তৃতীয় আসমানে রওয়ানা দিলেন।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন। জিবরাঈল আঃ দরজায় করাঘাত করলেন। দাররক্ষী ফেরেশতা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেন অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে মারহাবা জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃ তৃতীয় আসমানে প্রবেশ করে হজরত ইউসুফ আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। এরপর তাঁর সাথে সালাম বিনিময় করে চতুর্থ আসমানের দিকে রওয়ানা হলেন।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন। জিবরাঈল আঃ দরজায় করাঘাত করলেন। দাররক্ষী ফেরেশতা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেন অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে মারহাবা জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃ চতুর্থ আসমানে প্রবেশ করে হজরত ইদ্রিস আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তাঁর সাথে সালাম বিনিময় করে তিনি পঞ্চম আসমানের দিকে রওয়ানা হলেন।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন। জিবরাঈল আঃ দরজায় করাঘাত করলেন। দাররক্ষী ফেরেশতা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেন অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে মারহাবা জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃ পঞ্চম আসমানে প্রবেশ করে হজরত হারুন আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তাঁর সাথে সালাম বিনিময় করে তিনি ষষ্ঠ আসমানের দিকে রওয়ানা হলেন।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন। জিবরাঈল আঃ দরজায় করাঘাত করলেন। দাররক্ষী ফেরেশতা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেন অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে মারহাবা জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃ ষষ্ঠ আসমানে প্রবেশ করে হজরত মুসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তাঁর সাথে সালাম বিনিময় করে তিনি সপ্তম আসমানের দিকে রওয়ানা হলেন।
তারপর জিবরাঈল আঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে সপ্তম আসমানের দরজায় পৌঁছিলেন। জিবরাঈল আঃ দরজায় করাঘাত করলেন। দাররক্ষী ফেরেশতা পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেন অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে মারহাবা জানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাঃ সপ্তম আসমানে প্রবেশ করে হজরত ইব্রাহিম আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তারপর তাঁর সাথে সালাম বিনিময় করে তিনি সিদরাতুলমুনতাহায় পৌঁছেন। তারপর সেখান থেকে আল্লাহ তায়ালার আরশে আজীমে পৌঁছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাগণের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। রাসূল সাঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে আসিতেছিলেন পথিমধ্যে ষষ্ঠ আসমান হজরত মুসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন। তখন রাসূল সাঃ বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মত গণের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। মুসা আঃ এই কথা শুনে বললেন আপনি আল্লাহ তায়ালার নিকট পুনরায় ফেরত যান। কারণ, এতোগুলা নামাজ আপনার উম্মতেরা আদায় করতে পারবে না। এই কথা শুনে রাসূল সাঃ আল্লাহ তায়ালার নিকট পুনরায় ফেরত গেলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শুনে দশ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন।
তারপর পুনরায় আসার সময় মুসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি সব শুনে রাসূল সাঃ কে পুনরায় আল্লাহ তায়ালার নিকট ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে বললেন।আপনার উম্মত এতেগুলো নামাজ আদায় করতে পারবেন না। রাসূল সাঃ আল্লাহ তায়ালার নিকট পুনরায় ফেরত গেলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শুনে দশ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন। এমনিভাবে কয়েকবার যাওয়া আসার মাধ্যমে নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ করে দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার আদেশের কোন রদবদল হয় না। যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে আমি তাকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার সাওয়াব দান করবো। তারপর পুনরায় ফেরার পথে মুসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হলে সব শুনে তিনি রাসূল সাঃ কে বললেন আপনি আল্লাহ তায়ালার নিকট পুনরায় ফেরত যান এবং নামাজ আরো কমিয়ে আনুন কারণ, আপনার উম্মত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করতে পারবে না। এইবার রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, আমি আর আল্লাহ তায়ালার নিকট ফেরত যেতে পারবো না আমার লজ্জা করছে। তখন থেকে আমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়ে গেলো।
মেরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ সাঃ আল্লাহ তায়ালার আরো অনেক নিদর্শন দেখেছেন। যেমন, জান্নাত, জাহান্নাম, পাপি বান্দার শাস্তি ইত্যাদি।
শবে মেরাজের রোজাঃ
শবে মেরাজের কোন নির্দিষ্ট রোজা নেই।
শবে মেরাজের নামাজঃ
কুরআন হাদীসে শবে মেরাজের কোন নির্দিষ্ট নামাজের প্রমাণ নেই।
উপসংহারঃ
সূতরাং সূন্নাহ অনুযায়ী শবে মেরাজের আলোচনা করবো এবং এখান থেকে শিক্ষ গ্রহন করবো।
ট্যাগঃ
✅ #শবে_মেরাজ ✅ #মেরাজের_ঘটনা ✅ #ইসলামিক_ইতিহাস ✅ #কুরআন_ও_হাদিস
✅ #রাসুলের_মেরাজ ✅ #ইসলামিক_শিক্ষা ✅ #মেরাজের_মাহাত্ম্য ✅ #ইবাদত_ও_দোয়া
✅ #রাতের_ভ্রমণ ✅ #নবীজির_মুজিজা