আস্সালামু আলাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম! ওয়েব ডিজাইন সার্ভিস পেতে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ


পূর্ণাঙ্গ জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম

জানাযার নামাজ

জানাযার নামাজ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়ায়ে মাগফেরাত করা। জানাযার নামাজ কোন মৃত ব্যক্তির জন্য পড়া হয় না বরং তার জন্য দোয়া করা হয়। নামাজ পড়া হয় আল্লাহর জন্য আর দোয়া হয় মৃত ব্যক্তির জন্য। একমাত্র ইসলাম ধর্মেই আপনি এটা লক্ষ করতে পারবেন যে, মৃত ব্যক্তিকে কত সুন্দর করে গোসল দিয়ে, নতুন কাপড় পরিয়ে, আতর সুরমা মাখিয়ে সুন্দরভাবে কবর খনন করে কত যত্ন সহকারে তার জন্য জানাযার আয়োজন করে দোয়া করে তার পরে তাকে কবরে রাখা হয়। এমনকি আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, মৃত ব্যক্তির খাটিয়া ঘাড়ে নিয়ে তোমরা বেশী জোরে হাঁটবে না বরং ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে। কারণ, তার জান বের হওয়ার সময় অনেক কষ্ট হয়েছে এখন যদি তাকে নিয়ে হেলে দুলে ঝাঁকুনি দিয়ে দ্রুত চলা হয় তাহলে সে অনেক কষ্ট পাবে। দেখুন ইসলামের ভিতর কত সুন্দর্য্য?

পূর্ণাঙ্গ জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম

জানাযার নামাজ শুধু মুসলিমদের কপালেই হয়ে থাকে আর অন্য কোন ধর্মের লোকদের কপালে তা ঘটে না। কিন্তু অমুসলিমদের লাশ দেখলেও মুসলিমদেরকে সম্মান দেখানো উচিৎ। একবার রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সামনে দিয়ে একজন বিধর্মী লোকের লাশ নিয়ে যাওয়া হল তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। পরে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ সে তো অমুসিলম ছিল আপনি তাকে দেখে দাঁড়ালেন কেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, সে কি মানুষ নয়! তাহলে কি বুঝা গেল? রাসূলুল্লাহ সাঃ এর প্রতিটি কাজের মধ্যে আমাদের জন্য আদর্শ আছে যা অনুসরণীয়। অতএব, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়ায়ে মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে জানাযার নামাজ পড়া হয়।

জানাযার নামাজের ফজিলতঃ

জানাযার নামাযে অংশ গ্রহন করা হচ্ছে ঐ বান্দার হক। জানাযার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাজ পড়বে সে এক কিরাত সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি জানাযার নামাজ পড়ার পর কবর পর্যন্ত যাবে এবং তার কবরে মাটি দেয়া পর্যন্ত থাকবে তার আমল নামায় দুই কিরাত সাওয়াব লিখে দেয়া হবে। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ কবরাত কি? রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন এক কিরাত হলো উহুদ পাহাড় পরিমাণ সাওয়াব। সুবহানাল্লাহ

[বুখারী, হাঃ ৪৭, ১২২৪, মুসলিম, হাঃ ৯৪৫, তিরমিযী, হাঃ ১০৪০]

জানাযার নামাজ পড়ার নিয়মঃ

জানাযার নামাজ পড়ার জন্য কিছু নিয়ম কানুন আছে। সেগুলো মেনে জানাযার নামা পড়লে তাহলেই জানাযার নামাজ পূর্নাঙ্গ হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "সাল্লু কামা রয়াইতুমুনি উসাল্লি" অর্থাৎ আমাকে তোমরা যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেই ভাবে নামাজ পড়। তাহলে জানাযার নামাজ আল্লাহর রাসূল সাঃ যেভাবে পড়েছেন সেই ভাবেই পড়তে হবে। তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জানাযার নামাজ পড়ার বিধান জানতে হলে হাদীসের কেতাব পড়তে হবে বেশী বেশী করে। এসম্পর্কে লাইব্রেরীতে অনেক কেতাব আছে সেগুলো কিনে পড়তে হবে। আর যদি আপনার বাড়ীতে সিয়া সিত্তা কেতাব থাকে তাহলেতো আপনি সব কিছুই জানতে পারবেন। এখন সিয়া সিত্তা কাকে বলে? সিয়া সিত্তা হচ্ছে, ৬ খানা হাদীর প্রসিদ্ধ কেতাব। সেই কিতাবগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো।

১। বুখারী শরীফ

২। মুসলিম শরীফ

৩। তিরমিযী শরীফ

৪। নাসায়ী শরীফ

৫। আবু দাউদ শরীফ

৬। ইবনে মাজাহ


এই ছয় খানা কেতাবকে একত্রে সিয়া সিত্তা বলে। এই কিতাবগুলো অধ্যয়ণ করলে জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম জানা যাবে।

জানাযার নামাজের নিয়ম

এখন জানাযার নামাযের নিয়ম কানুন আলোচনা করা হচ্ছে,

জানাযার নামাজ চার তাকবীরের সাথে পড়তে হয়। নিচে নিয়ম বলে দেয়া হলো।

প্রথমে অযু করতে হবে, তারপর দাঁড়িয়ে নিয়ত করতে হবে, তারপর তাকবীর দিতে হবে। তারপর সানা পড়তে হবে, তারপর আবার তাকবীর দিতে হবে। তারপরে দরুদে ইবরাহীম পড়তে হবে, তারপর আবার তাকবীর দিতে হবে। তারপরে দোয়া পড়তে হবে, তারপর আবার তাকবীর দিতে হবে। তারপরে উভয় দিকে সালাম ফিরাতে হবে।

এখন জানাযার নামাজ পড়ার বিস্তারিত নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হচ্ছে।

জানাযার নামাজের ফরজ কয়টি?

জানাযার নামাজের ফরজ হচ্ছে, ৪টি তাকবীর দেয়া। অর্থাৎ চার তাকবীরের সহিত জানাযার নামাজ পড়া। এছাড়াও আরো কিছু ফরজ আছে, যেমন শরীর পাক হওয়া, কাপড় পাক হওয়া, নামাজের স্হান পাক হওয়া, নামাজের ন্যায় অজু করা।

জানাযার নামাজের নিয়ত

আরবী নিয়তঃ

نَوَيتُ اَن اُوَدِّيَ لِلَّلهِ تَعَالَى اَربَعَ تَكبِيرَاتِ صَلَوةِ الجَنَازَةِ فَرضِ الكِفَايَةِ وَالثَّنَاءُ لِلَّلهِ تَعَالَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النّبِيِّ وَالدُّعَاءُ لِهَذَا ( لِهَذِهِ) المَيِّتِ اِقتِدَتُ بِهَذَا الاِمَامِ مُتَوَ جِّهًا اِلَى جِهَةِ الكَعبَتِ الشَّرِيفَةِ اَلَّلهُ اَكبَر.

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া তাকবিরাতি সালাতিল জানাযাতি ফারদিল কিফায়াতি ওয়াছ ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াস সালাতু আলান নাবিয়্যি ওয়াদ দুয়াউ লিহাযাল মাইয়্যিতি (যদি মহিলা হয় তখন বলতে হবে লিহাযিহিল মাইয়্যিতি) ইকতিদাতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

অর্থঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কেবলামূখি হয়ে জানাযার নামাজ চার তাকবীর ফরজে কেফায়া ইহা আল্লাহর জন্য প্রশংসা, নবীর উপর দরুদ এবং এই মাইয়্যিতের জন্য দোয়ার লক্ষ্যে এই ইমামের পিছনে পড়ার নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।

বাংলা নিয়তঃ

নামাজ আল্লাহর জন্য, দোয়া এই মাইয়্যেতের জন্য, জানাযার ফরজে কেফায়া নামাজ চার তাকবীরের সহিত, এই ইমামের পিছনে পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।

জানাযার নামাজের ছানা

سُبحَانَكَ اَلَّهُمَّ وَبِحَمدِكَ وَ تَبَارَكَسمُكَ وَ تَعَلَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُك وَلَا اِلَهَ غَيرُكَ.

উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুক।

অর্থঃ হে আল্লাহ তোমার জন্য পবিত্রতা, এবং তোমার প্রশংসা সহকারে এবং বরকতময় তোমার নাম তুমি মহিমান্বিত এবং তোমার প্রশংসার মহিমা, এবং তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।

জানাযার নামাজের দরুদ

اَلَّلهُمَّ صَلِّي عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَاصَلَّيتَ عَلَى اِبرَاهِيم وَعَلَى اٰلِ اِبرَاهِيمَ اِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيد.
اَلَّلهُمَّ بَارِك عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَرَكت
عَلَى اِبرَاهِيم وَعَلَى اٰلِ اِبرَاهِيمَ اِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيد.


উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ সাঃ এর উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার পরিবারের প্রতিও। যেমনি ভাবে রহমত বর্ষণ করেছিলেন ইবরাহীম আঃ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ সাঃ এবং তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি। যেমনি ভাবে বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম আঃ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

জানাযার নামাজের দোয়া

اَللَّهُمَّ اغْفِر لِي حَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَ شَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَارِنَا وَاُنثَانَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ
عَلَى الِْاسلَام وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الِايْمَان.


উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হাইয়্যিনা, ওয়া মাইয়্যিতিনা, ওয়া শাহিদিনা, ওয়া গয়িবিনা, ওয়া ছগিরিনা, ওয়া কাবিরিনা, ওয়া যাকারিনা, ওয়া উনছানা, আল্লাহুম্মা মান আহ ইয়াই তাহু মিন্না ফা আহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান।

শেষ কথাঃ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানাযার নিয়ম কানুনগুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন

FAQ

প্রশ্নঃ জানাযার নামাজের ফরজ কয়টি?

👉 জানাযার নামাজ ৪ তাকবিরের সহিত আদায় করতে হয়। এই ৪টি তাকবীর দেয়াই ফরজ।

প্রশ্নঃ জানাযার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

👉 জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে নিয়ত করে তাকবীর বলে হাত বাঁধতে হবে। তারপর সানা পড়তে হবে। তারপর তাকবীর বলে দরুদে ইব্রাহিম পড়তে হবে। তারপর তাকবীর বলে নির্দিষ্ট দোয়াটি পড়তে হবে। তারপর আবার তাকবীর বলে উভয় দিকে সালাম ফিরাতে হবে। তাকবীর মোট ৪টি দিতে হবে।

প্রশ্নঃ জানাযার নামাজে কি কি দোয়া পড়তে হয়?

👉 প্রথমে ছানা পড়তে হয়-

উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুক।

👉 তারপর দরুদে ইব্রাহিম পড়তে হয়-

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

👉 তারপর একটি নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়-

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হাইয়্যিনা, ওয়া মাইয়্যিতিনা, ওয়া শাহিদিনা, ওয়া গয়িবিনা, ওয়া ছগিরিনা, ওয়া কাবিরিনা, ওয়া যাকারিনা, ওয়া উনছানা, আল্লাহুম্মা মান আহ ইয়াই তাহু মিন্না ফা আহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান।

ট্যাগসমূহঃ

জানাজার নামাজের নিয়ম হানাফি, জানাজার নামাজের তৃতীয় দোয়া, জানাজার নামাজের নিয়ম আহলে হাদিস, জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ সহ, জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের নিয়ত বাংলায়
Sakoler IT

আমি মোঃ আজিজুল হাকিম। আমি একজন ওয়েব ডিজাইনার, ওয়েবসাইট ডিজাইনের সার্ভিস দিয়ে থাকি, প্রায় ৭ বছর যাবৎ উক্ত কাজে নিয়োজিত আছি।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post