ঈমান কাকে বলে?
ঈমান অর্থ, বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতা মণ্ডলী, নবী-রাসূল, আসমানী কেতাব, আখেরাত, কিয়ামত, হাশর নশর ইত্যাদি বিষয়ে খাঁটি দিলে বিশ্বাসের নামই ঈমান।
ইসলাম পাঁচটি খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত, যথাঃ
১. ঈমান
২. নামায
৩. যাকাত
৪. হজ্জ
৫. রোযা
ঈমানে মুজমালঃ
প্রথম খুঁটি হচ্ছে, ঈমান। ঈমান অর্থ, বিশ্বাস। তাওহীদের উপর বিশ্বাসস্হাপন করা জরুরী। তাওহীদ হচ্ছে, একাত্মবাদ। আল্লাহ এক এবং একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই এটাই তাওহীদ। ঈমান হচ্ছে সাতটি বিষয়ের উপর বিশ্বাসের নাম।
১। আল্লাহর উপর বিশ্বাস
২। ফেরেশতা মন্ডলীর উপর বিশ্বাস
৩। আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস
৪। সমস্ত নবী এবং রাসূলগনের উপর বিশ্বাস
৫। আখেরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস
৬। তাকদীরের ভালো মন্দ সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এর উপর বিশ্বাস
৭। মৃত্যুর পরের জীবনের উপর বিশ্বাস
ঈমান সম্পর্কে কোরআনর আয়াতঃ
অর্থঃ আর যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তারাই জান্নাতের অধিবাসী।
[সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ ৮২]
অর্থঃ যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে, তাগুত। সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এরা জাহান্নামের অধিবাসী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
[সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ ২৫৭]
অর্থঃ নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাদের প্রতিদান নিঃসন্দেহে তাদের রবের কাছে আছে এবং তাদের কোন ভয় ও চিন্তাও নেই।
[সূরাঃ বাকারাহ, আয়াতঃ ২৭৭]
অর্থঃ আর যারা ঈমান ও সৎকাজ করার নীতি অবলম্বন করেছে, তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। ভালো করে জেনে রাখো, আল্লাহ জালেমদেরকে কখনোই ভালোবাসে না।
[সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫৭]
আরো পড়ুন,
ঈমান বা আকাইদ সম্পর্কে হাদিসঃ
হাদিসঃ আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ঈমানের ৭০টির ও বেশী শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এ কথার সাক্ষ্য দেয়া। সাধারণ শাখা হচ্ছে, রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তুকে সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জাশীলতা হচ্ছে, ঈমানের একটি শাখা।
[বুখারী, হাঃ ৯, মুসলিম, হাঃ ৩৫, নাসায়ী, হাঃ ৫০০৫, ইবনে মাজাহ, হাঃ ৫৭]
হাদিসঃ আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে, তার পিতা, তার সন্তান এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে প্রিয়তম হই।
[বুখারী, হাঃ ১৫, মুসলিম, হাঃ ৪৪, ইবনে মাজাহ, হাঃ ৬৭]
হাদিসঃ আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, সেই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাঃ কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।
[মুসলিম, হাঃ ৩৪, তিরমিযী, হাঃ ২৬২৩, আহমাদ, হাঃ ১৭১৮]
হাদিসঃ সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আস সাকাফী রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল সাঃ! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি চুড়ান্ত কথা বলে দিন, যে সম্পর্কে আপনার পরে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয়। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি, তুমি এ কথা বল এবং এ ঘোষণায় দৃঢ় থাকো।
[মেশকাত, হাঃ ১৫]
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনার মধ্যে রয়েছে, ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন মুক্তি। ঈমান ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। ঈমান থাকলে একদিন না একদিন আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
হাদিস (১) উসমান রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এ কথা বিশ্বাস রেখে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[মুসলিম, হাঃ ১৪৫, আহমাদ, ৪৬৪]
হাদিস (২) মুয়াজ ইবনে জাবাল রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যার শেষ কথা হবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[আবু দাউদ, হাঃ ৩১১৮]
হাদিস (৩) মুয়াজ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি খাঁটি মনে বিশ্বাসের সাথে বলবে, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[আহমাদ, হাঃ ২২০০৩, বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান,
হাঃ ৭]
হাদিস (৪) আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আল্লাহ বলবেন, সেই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের কর, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে। সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার হৃদয়ে অনু বা (ভুট্টা) পরিমাণ ঈমান আছে। আর সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে এবং তার হৃদয়ে গমের দানা পরিমাণ ঈমান আছে।
[আহমাদ, ৩য় খন্ডঃ ২৭৬ পৃঃ, তিরমিযী, হাঃ ২৫৯৩]
হাদিস (৫) আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, নুহ আঃ মৃত্যুর সময় তাঁর দুই ছেলেকে অসিয়ত করে বললেন, আমি তোমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (বলার) আদেশ করছি। যদি সাত আসমান এবং সাত জমিনকে দাঁড়ি পাল্লার একদিকে রাখা হয় এবং অপরদিকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কে রাখা হয়, তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পাল্লা বেশী ভারী হবে।
[আহমাদ, হাঃ ৭১০১, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৪র্থ খন্ডঃ ২১৯ পৃঃ]
ঈমান ভঙ্গের কারণঃ
ঈমান ভঙ্গের কারণ ১০টি। নিচে এক এক করে আলোচনা করা হল।
১। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা।
২। নিজের এবং আল্লাহ তায়ালার মধ্যে কোন প্রকার মধ্যস্ততাকারী গ্রহণ করা।
৩। কাফের এবং মুশরিকদেরকে কাফের বলে বিশ্বাস না করা।
৪। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বিচারের চেয়ে অন্য কারো বিচারকে উত্তম মনে করা।
৫। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আনীত কোন বিধানকে অপছন্দ করা।
৬। ইসলামের কোন বিধি বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা।
৭। যাদু করা।
৮। মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা।
৯। যে কোন ব্যক্তিকে দ্বীন এবং শরীয়তের উর্ধে মনে করা।
১০। দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।
ট্যাগ
ঈমানের মূল বিষয় কয়টি, ঈমানের মূল বিষয় কি, ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে, ঈমান কাকে বলে ক্লাস ৪, ঈমান কাকে বলে ক্লাস ২, ঈমান কাকে বলে উত্তর
FAQ
প্রশ্নঃ ঈমানের ৭টি বিষয় কি কি?
উত্তরঃ ১। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস। ২। সমস্ত ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস। ৩। সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস। ৪। সমস্ত রাসূলগনের উপর বিশ্বাস। ৫। পরকালের উপর বিশ্বাস। ৬। তাকদীরের ভালো হোক, মন্দ হোক সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। ৭। মৃত্যুর পরের জীবনের উপর বিশ্বাস।
প্রশ্নঃ ঈমান কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ ঈমান অর্থ, বিশ্বাস, স্বীকৃতি। শরীয়তের পরিভাষায়, অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কর্মের মাধ্যমে বাস্তবায়নের নাম ঈমান।
৭টি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয়। যেমন,
১। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস। ২। সমস্ত ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস। ৩। সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস। ৪। সমস্ত রাসূলগনের উপর বিশ্বাস। ৫। পরকালের উপর বিশ্বাস। ৬। তাকদীরের ভালো হোক, মন্দ হোক সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। ৭। মৃত্যুর পরের জীবনের উপর বিশ্বাস।
প্রশ্নঃ ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে?
উত্তরঃ ইসলাম শব্দটি আসছে সিলমুন শব্দ থেকে। সিলমুন শব্দের অর্থ হচ্ছে, আত্মসমর্পণ। সুতরাং ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ। আর যারা আত্মসমর্পণ করে তাদেরকে মুসলিম বলা হয়।
ঈমান শব্দের অর্থ হচ্ছে, বিশ্বাস যারা ৭টি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করে তাদেরকে বলা হয় মুমিন। মুমিন মানে বিশ্বাসী। ৭টি বিষয় হচ্ছে,
১। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস। ২। সমস্ত ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস। ৩। সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস। ৪। সমস্ত রাসূলগনের উপর বিশ্বাস। ৫। পরকালের উপর বিশ্বাস। ৬। তাকদীরের ভালো হোক, মন্দ হোক সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। ৭। মৃত্যুর পরের জীবনের উপর বিশ্বাস। একজন মুমিন যখন সকল কিছুকে বিশ্বাস করে তার জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিবে তখন সে হবে মুসলিম।
শেষ কথাঃ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উক্ত কথাগুলো বুঝে শুনে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন